মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝের ভূভাগে আছড়ে পড়বে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল(Remal Cyclone)। সাগরদ্বীপ, ক্যানিং ও দিঘার আরও কাছে চলে এসেছে রেমাল। অতি শক্তিশালী রেমালের প্রভাব পড়তে চলেছে এরাজ্যের উপকূলের জেলাগুলিতে। ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় তৎপর প্রশাসন। উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক(Remal Cyclone Alert) করতে প্রচার শুরু করেছে প্রশাসন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, ত্রাণ শিবির।
রাজ্যের প্রশাসনের তরফে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
উপকূলের জেলাগুলিতে নদী ও সমুদ্র তীরের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচার করছে করছে জেলা প্রশাসন।
কাঁথি, হলদিয়া, দিঘায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
উপকূলীয় এলাকায় তৈরি রাখা হয়েছে ত্রাণ শিবির।
হলদিয়া পুরসভার সমস্ত কর্মী আধিকারিকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
হাওড়ার শ্যামপুরে, হুগলি নদীর তীরে গাদিয়াড়া, শিবগঞ্জ, বাণেশ্বরপুর, গুজারপুর-সহ একাধিক গ্রামে প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।এলাকায় পৌঁছেছে ৩০ জনের এনডিআরএফ টিম।
ত্রাণ শিবিরগুলিতে পানীয় জল ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে মৎসজীবীদের।
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার তরফ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
কাকদ্বীপ, ক্যানিং, ফ্রেজারগঞ্জ থেকে শুরু করে সুন্দরবন এলাকায় ঘোড়ামারা, মৌসুনি দ্বীপ, জি প্লটের মতো প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোতে ইতিমধ্যেই জল ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।বিপর্যয় মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে NDRF।
কলকাতা পুরসভার তরফে কী কী ব্যবস্থা?
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় তৎপর কলকাতা পুরসভা।
রবি ও সোমবার পুরসভার কন্ট্রোল রুমে শীর্ষ আধিকারিকেরা ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকবেন।
বিপর্যয় মোকাবিলায় সিইএসসি-র সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির জেরে গাছ ভেঙে পড়লে তা দ্রুত সরাতে প্রতিটি বরোর জন্য বিশেষ দল গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারী বৃষ্টি হলে জল জমে মহানগরীতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই নিকাশি দফতর বাড়তি সতর্পুকতা জারি করেছে পুরসভা। শহরের বিভিন্ন গালিপিথে যাতে আবর্জনা জমে না থাকে, সেই বিষয়েও জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে সতর্ক থাকতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃষ্টি হলে বাতিস্তম্ভে হাত লেগে যাতে দুর্ঘটনা না হয় তা ঠেকাতে যথাসম্ভব ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। এব্যাপারে আলো দফতরের ডিজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ঝড়বৃষ্টির আগে শহরের প্রতিটি বাতিস্তম্ভ যেন যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হয়। খোলা ফিডার বক্সে অবিলম্বে ঢাকনা দিতে বলা হয়েছে
এছাড়াও শহরের বিপজ্জনক হোডিং খুলে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছেন পুর কমিশনার।
কলকাতা পুলিশ দুটি হেল্পলাইন নম্বর শেয়ার করেছে। নম্বর দুটি হল- ৯৪৩২৬ ১০৪২৮ এবং ৯৪৩২৬ ১০৪২৯। এছাড়া কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বর শেয়ার করা হয়েছে। হেল্পলাইন নম্বরটি হল- ০৩৩-২২১৪-১৯৮৮
দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থা রেল পরিবহনেও
পূর্ব রেলের তরফ থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
বিভিন্ন স্টেশনে থাকছে হেল্প ডেস্ক।
ঝড়ে ওভারহেড তার ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্রুত মেরামতির জন্য টাওয়ার ভ্যান তৈরি রাখা হচ্ছে।
ব্যবস্থা করা হচ্ছে বিকল্প ইঞ্জিনের।
দুর্যোগের কারণে বাতিল বহু ট্রেন
রবি ও সোমবার বাতিল করা হয়েছে একাধিক ট্রেন। রবিবার রাত ১১টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৫৩টি লোকাল ট্রেন বাতিল, বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে।
তার মধ্যে রয়েছে শিয়ালদা – লক্ষ্মীকান্তপুর, শিয়ালদা-বজবজ, শিয়ালদা-ক্যানিং, শিয়ালদা-ডায়মন্ড হারবার লোকাল।
সোমবারও বাতিল করা হচ্ছে একাধিক ট্রেন, লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা , শিয়ালদা-লক্ষ্মীকান্তপুর, শিয়ালদা-বজবজ, শিয়ালদা-ক্যানিং, শিয়ালদা-ডায়মন্ড হারবার, শিয়ালদা-সোনারপুর, শিয়ালদা-বারুইপুর, শিয়ালদা-বারাসত-হাসনাবাদ লোকাল।
রবি ও সোমবার বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করেছে দক্ষিণ পূর্ব রেল।
বন্ধ বিমান পরিষেববা
রবিবার বেলা ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা, ২১ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরে সমস্ত উড়ান পরিষেবা। এর ফলে ৩৪০টি অন্তর্দেশীয় ও ৫৪টি আন্তর্জাতিক বিমান বাতিল করা হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বিমানযাত্রীর দুর্ভোগে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্ধ ফেরি পরিষেবা
দুর্ঘটনা এড়াতে রবি ও সোমবার গাদিয়াড়া থেকে সব ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
রবি ও সোমবার হাওড়া থেকে কলকাতা সব ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি।
হুগলি থেকে খড়দা, পানিহাটি, জগদ্দল যাওয়ার ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকছে রবিবার।
(বিস্তারিত খবর, সঠিক খবর, গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে ফলো করুন আমাদের X (Twitter), Facebook, YouTube, এবং Instagram পেজ)