সম্প্রতি ভারতের দুটি নামী মশলার ব্র্যান্ড নিষিদ্ধ করেছে সিঙ্গাপুর, হংকং এবং নেপাল।MDH এবং Everest

Indian Spices banned: নামী দুই ব্র্যান্ডের মশলা ব্যবহারের পরিণাম ক্যান্সার! সিঙ্গাপুর, হংকং, নেপালে নিষিদ্ধ এই দুই সংস্থার মশলা! সতর্ক আমেরিকা, ইউরোপীয় দেশগুলিও

Health International National News
Share this news

আপনি যে খাবারটা খাচ্ছেন, সেই খাবারে মারণ রোগের আশঙ্কা রয়েছে কিনা আপনি কি জানেন?  আপনি যে মশলা ব্যবহার করে সুস্বাদু খাবার বানাচ্ছেন সেই মশলাতেই রয়েছে এমন এক রাসায়নিক, যেটাতে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে আপনার!

সম্প্রতি ভারতের দুটি নামী মশলার ব্র্যান্ড নিষিদ্ধ করেছে সিঙ্গাপুর, হংকং এবং নেপাল।MDH এবং Everest। এইদুটি ব্র্যান্ডের মশলা গৃহস্থের রান্নাঘরে, রেস্তরাঁয় খাবার সুস্বাদু বানাতে অহরত ব্যবহার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই সংস্থাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানিও করে আসছিল নিজেদের মশলা। কিন্তু এই মশলাতে কী রয়েছে তা জানলে চক্ষু চড়কগাছ। এই দুই ব্যান্ডের মশলায় পাওয়া গিয়েছে অত্যন্ত ক্ষতিকারক রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইড যা  মানবদেহে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। আর এই মশলা বছরের পর বছর ধরে আমরা খেয়ে চলেছি, কারণ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে এই মশলা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই, আমরা সেটি কিনছি, রান্নায় ব্যবহার করছি, তারপর সেটা খাচ্ছি। সেই সঙ্গে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছি অজান্তেই।

আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক…

প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় মশলার সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বের, মশলার কারণে ভারতের সঙ্গে একসময় বাণিজ্যিক সপ্রর্ক গড়ে উটেছিল পশ্চিমের দেশগুলির। জাহাজ বোঝাই করে ভারতীয় মশলা পাড়ি দিত দূর দেশে।যুগ যুগ ধরে যে প্রশংসা, সুখ্যাতি অর্জন করা হয়েছে মশলার সৌজন্যে, সেই সুখ্যাতিতে একেবারে জল ঢালল এই দুই সংস্থা MDH এবং Everest তথা ভারত সরকার।

বিশ্বের একাধিক দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এই মশলাগুলি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে কিছু দেশে, তারাও হয়তো এই পথেই হাঁটবে।

চলতি বছরের ৫ এপ্রিল মাসেই হংকং-এর ফুড কোয়ালিটি সেন্টার থেকে নোটিফিকেশন জারি করা হয়। MDH-এর তিনটি মশলা মাদ্রাস কারি পাউডার, কারি পাউডার ও সাম্বার মশলা নিষিদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে Everest-এর একটি মশলা ফিস কারি পাউডার নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ এই মশলাগুলিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইড অতিমাত্রায় রয়েছে।এই  ইথিলিন অক্সাইড এমন একটি জিনিস যার শরীরে গেলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।পাশপাশি সিঙ্গাপুরের ফুড পরীক্ষার পর Everest-এর ফিস কারি মশলা নিষিদ্ধ করা হয়।

ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুর, হংকং, মলদ্বীপ এমনকি ভারতের পড়শি দেশ নেপালেও একেবারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই মশলাগুলিকে। আমেরিকা,  অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে পরীক্ষা চলছে এই মশলাগুলি নিয়ে, খুব শীঘ্রই নিষিদ্ধ হতে চলেছে সেখানেও।

MDH এবং Everest-এর মশলা একাধিক দেশে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু জানেন কি, বিগত ৪ বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফুড সেফটি অথোরিটিস ৫২৭টি ভারতীয় খাদ্রসামগ্রী ব্যান করে দিয়েছে! যেখানে শুধু মশলাই নয় ভারতীয় বাদাম, সিরিয়াল, আইসক্রিম,ফল, সব্জি সহ বিভিন্ন সামগ্রীতে রয়েছে ইথিলিন অক্সাইড।

আবার আমেরিকাতে গত ৬ মাসে যত যত মশলা পাঠানো হয়েছে  এমডিএইচ-এর তরফে , তার মধ্যে ৩১ শতাংশ মশলা ফেরত পাঠানো হয়েছে, তার কারণ সেই মশলায় সালমোনেলা  নামে এক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গিয়েছে। যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে পেটের গোলমাল, জ্বর, বমি বমি ভাব হতে পারে, এমনকি মানুষের নার্ভাস সিস্টেমেও ক্ষতি আশঙ্কা রয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই সমস্ত বিষয় গুলি আমরা জানতে পারছি ভারতের বাইরের দেশগুলির পদক্ষেপে। কিন্তু এত বড় ইস্যু, যেখানে দেশের ১৪০ কোটি মানুষের প্রাণের প্রশ্ন, সেই ভারত সরকারের থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সতর্কতা কেন জারি হল না? 

তার চেয়েও বড় প্রশ্ন কারা এই মশলার অনুমতি দেয়? তারা কীভাবে দিলেন এই মশলা বিক্রির অনুমতি?

MDH সংস্থার বক্তব্য, এই মশলাগুলিতে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্রুভাল ও ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে স্পাইস বোর্ড অব ইন্ডিয়া যেটা রেগুলেট করে কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক। অন্যদিকে খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করে FSSAI (food safety and standards authoruty of India), যেটা দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীনে।

তবে কি ১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বাস্থ্য, প্রাণ নিয়ে খেলা চলছে এদেশে? এত গুলো দেশ যখন এক এক করে এই দুই সংস্থার মশলা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে এবং আমেরিকা, ইউরোপীয় দেশগুলিতে যেখানে মশলা এবং বিভিন্ন ভারতীয় খাদ্য সামগ্রী ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে ক্ষতিকারক রায়াসনিক ইথিলিন অক্সাইড বা সালমোনেলার মতো ব্যাটেরিয়া থাকার জন্য, সেখানে ভারত সরকারের কোন পদক্ষেপ নজরে আসছে?

এই দেশে মশলায় পেস্টিসাইটের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, যতটা গ্রহণযোগ্য, তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি বাড়ানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অর্থাৎ বাইরের দেশগুলো যেখানে তাদের দেশবাসীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উদ্বিগ্ন, আমাদের দেশ ভারত ক্যান্সারের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের!

কিন্ত যে রাসায়নিক নিয়ে বিশ্বে তোলপাড়, আসলে সেটা কেন ব্যবহার করা হয় মশলা বা খাদ্যে?

প্রথমত, এই ইথিলিন অক্সাইড ভীষণভাবে ব্যবহৃত হয় ইন্ডাসট্রিতে। এই রাসায়নিক কোনও মশলা বা খাদ্য সামগ্রীতে দেওয়া হয়  ক্ষতিকারক জীবানু কিংবা ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে। এই রায়ায়নিকের মাধ্যমে ই-কোলাই, সালমোনেলা, ফাঙ্গাস এসবের থেকে খাদ্য সামগ্রীকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। এই রাসায়নিক গ্যাসের মাধ্যমে প্যাকেজিং-এর আগে দেওয়া হয়ে থাকে সাধারণত। কিন্তু মশলা প্রসেসিং-এর সময় ইথিলিন অক্সাইড যেমন দেওয়া হয়ে থাকে, তেমন এই রায়ায়নিক মশলা বা খাদ্য থেকে  মুক্ত করার জন্য ওয়াসিংও করা হয়ে থাকে।যা খুবই গুরুত্বহপূর্ণ  এই ওয়াসিং ঠিক মতো না করা হলে এই ক্ষতিকারক রাসায়নিক মশলায় থেকে যাবে। মশলা বা খাদ্যে থেকে যাওয়া রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক কমপাউন্ড তৈরি করে ফেলে যেটা আমাদের শরীরে গ্রহণযোগ্য নয়। এই কারণে Internatiional agency for research on cancer এই ইথিলিন অক্সাইডকে ক্যান্সারের অন্যতম প্রথম সারির কারণ বলে ব্যাখ্যা করেছে।

উল্লেখ্য, ভারতে এই দুই সংস্থার মশলা নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে চলেছে সরকার, তা সাধারণ মানুষের কাছে এখনও স্পষ্ট নও। সরকারের আশায় না থেকে ইন্টারনেটে সমস্ত তথ্যের যাচাই করে নিজের স্বাস্থ্যরক্ষার তাগিদে, মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে সতর্ক হন আপনিও

(বিস্তারিত খবর, সঠিক খবর, গুরুত্বপূর্ণ খবর  জানতে  ফলো করুন আমাদের  X (Twitter), Facebook, YouTube, এবং Instagram পেজ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *