মে দিবস নিয়ে বলতে গেলে এই দিনের ইতিহাস ও তাৎপর্য না বললেই নয়।
পয়লা মে। বিশ্বব্যাপী এই দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস (International Labour Day) হিসাবে পালিত হয়। শ্রমিক সম্মানার্থে পালিত এই দিনটি মে দিবস নামেও আমরা জানি।দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি ও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কোনও একদিনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না মে দিবস।সুদীর্ঘ শতাব্দী ধরে শ্রমিকদের বঞ্চনা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে শ্রমিক সমাজ গর্জে উঠেছিল।
১৮২৭ সাল থেকে এই শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। পৃথিবার প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন হিসাবে খ্যাত ‘মেসিনস ইউনিয়ন অব ফিলাডেলফিয়া’, ১০ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।
১৮৩৪ সালে নিউ ইয়র্কের বেকারী শ্রমিকরা ১৮-২০ ঘণ্টা কাজের প্রতিবাদে ঘর্মঘট করে
১৮৩৭ সালে ১০ ঘণ্টার কর্ম দিবস একটি আন্দোলনের রূপ নেয়
তারপর ১৮৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে সোচ্চার হয়ে আন্দোলন শুরু করে।
এরপর ১৮৭৭ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী, ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি ও উন্নত কর্ম পরিবেশের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে
কিন্তু রাষ্ট্র এসব সংগ্রাম-আন্দোলনের প্রতি নিষ্ঠুর দমননীতি প্রয়োগ করে। ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত শ্রমিকের দাবি আদায়ের সংগ্রামে প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক বলিদান দেন।
আমেরিকার ‘ফেডারেশন অব লেবার’ তাদের জাতীয় সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের দাবি না মানা হলে ১৮৮৬ সালের ১লা মে দিনটিতে সারাদেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ধর্মঘট করবে।এরপর মালিকপক্ষের দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে শ্রমিক আন্দেলনকে নস্যাৎ করতে নানান ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তারা। শ্রমিকদের গ্রেফতার সহ নানা নির্যাতনমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও দমাতে পারেনি শ্রমিক সমাজকে।
১৮৮৬ সালের ১লা মে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ১১ হাজারেরও বেশি শিল্প কারখানার শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নেন।
৩রা মে শিকাগোর মেক কমিক রিপার কারখানার শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। ৬ জন শ্রমিক নিহত হন।
৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট স্কোয়ারে বিশাল শ্রমিক সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। এই সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণ চলে।শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত হন আরও ৪ জন শ্রমিক এবং মারা যান ৭ জন পুলিশ। আরও অনেক শ্রমিক আহত হন এবং বহু শ্রমিক গ্রেফতার হন। কেউ যাবজ্জীবন তো কেউ ফাঁসির দড়িতে বলিদান দেন।
কিন্তু হে মার্কেটের ঘটনাই শ্রমিক আন্দোলনের নতুন দিগন্ত রচনা করে দিয়েছিল। এই ঘটনায় পর ৩ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু লাগাতার আন্দোলন চলতেই থাকে।
১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশ। এই সমাবেশেই পয়লা মে দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৮৯০ সালে গ্রেট বিটেনে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। পরে রাশিয়া, চীন, জার্মানিতেও মে দিবস পালিত হতে শুরু করে।
১৯২৩ সাল থেকে ভারতে মে দিবস পালন শুরু হয়েছিল। ওই বছর চেন্নাই তথা তৎকালীন মাদ্রাজে প্রথম এই শ্রমিক দিবস পালন করে হিন্দুস্তান লেবার কিষাণ পার্টি।বাম নেতা মালায়প্পুরম তাঁর মেয়ের লাল শাড়ি ছিঁড়ে তা পতাকা রূপে ব্যবহার করেছিলেন ওইদিন। সেই প্রথম ভারতে উত্তোলিত হয়েছিল ‘লাল ঝান্ডা’।
Khub bhalo info