তন্দ্রা মুখার্জী: সুপ্রাচীন ভারতবর্ষের চিরকালের শ্রেষ্ঠ ধর্মশিক্ষা পাওয়া যায় ‘উপনিষদ’ থেকে। সর্বজনীন প্রার্থনার বাণী সেথা উল্লিখিত হয়েছে “আসতো মা… সদগময়ো তমসোমাঙ জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মামৃতম গময়… আবিরাবীর্ম এধি”। অর্থাৎ, অসৎ পথ থেকে মোরে সতপথে নাও,জ্ঞানের আলোক জ্বেলে আঁধার ঘুচাও, মৃত্যু থেকে উত্তরণ ঘটাও আমার অমৃতে – হে সর্বশক্তিধর, তুমি প্রকাশিত হও আমার মাঝে। এই ধর্মবোধ ও বিশ্বাসের উচ্চারণ ভারতকে দান করেছে – ‘সনাতন’ আখ্যা। নির্দিষ্ট এই ধর্মজ্ঞান বিভেদ করতে শেখায়নি সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর হিসাবকে অথবা, ধার্মিক তথা অধার্মিক সুলভ বিশেষণের ধর্মচেতনাকে সজ্ঞায়িত করতে। মানুষের অন্তরকে শুদ্ধ করার এই স্তোত্রের প্রতিটি শব্দ আকুল হয়ে নিবেদন করতে শিক্ষা দেয় মানুষের পরমশক্তি, মহানত্বের নিকট। সব ধর্মের ওপরে আত্মার শুদ্ধিকরণের উপাচার এই আবৃত্তি। হৃদয় মথিত আবেদনে নিজের মধ্যে ত্রিজগতের সর্বোত্তমের প্রকাশকে ধারণ করতে পারার শক্তি ভিক্ষা চাওয়ার যুগপথ শিক্ষা ও নম্রতা এক পদ্ধতি এটি। সেই অনন্যকে উপলব্ধি করার আকুতি মিশে থাকা চাই; পরম প্রকাশের কাছে; আপন হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করার প্রণতি জানিয়ে। তারই মাঝে নিহিত আছে সনাতন ধর্মের জ্ঞানবাণী। নেই তা কোনও ভ্রান্ত অথবা অতি ভ্রান্ত এবং কোনও অশিক্ষার মধ্যে – যারা ব্যক্তিবিশেষের উপস্থিতি জীবনে জাহির করতে চায়: সেইসব মূঢ়, অর্বাচীনতুল্য ক্ষুদ্র অতি-ক্ষুদ্র মানুষদের কাছে।