বাংলার সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য শনিবার একাধিক নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে সেই নিয়মবিধি চালু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে মহিলা সুরক্ষায় ১৫ দফা পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে।
কী-কী রয়েছে ‘রাত্তিরের সাথী’ কর্মসূচিতে-
১) রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন হস্টেল-সহ বিভিন্ন জায়গায় মহিলা কর্মজীবীদের জন্য আলাদা শৌচালয় ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
২) মহিলা কর্মজীবীদের নিরাপত্তার জন্য রাতে কর্মস্থলে রাখা হবে ‘রাত্তিরের সাথী’ নামে বিশেষ মহিলা স্বেচ্ছাসেবক।
৩) প্রতিটি কর্মস্থল সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। ২৪ ঘন্টা ধরে চলবে বিশেষ নজরদারি।
৪) মহিলা কর্মজীবীদের জন্য চালু করা হচ্ছে বিশেষ সঙ্কেতযুক্ত বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (মোবাইল অ্যাপ)। প্রতিটি মহিলা কর্মজীবীর ফোনে ওই মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে স্থানীয় থানার যোগাযোগ থাকবে। অর্থাৎ কোনও মহিলা বিপদে পড়লে ওই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই সরাসরি থানায় বিশেষ বার্তা পাঠাতে পারবেন।
৫) মহিলা কর্মজীবীদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু হচ্ছে। আপাতত ১০০ ও ১১২ নম্বরে সাহায্য চেয়ে ফোন করতে পারবেন।
৬) জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে ঢোকা প্রত্যেকেরই শ্বাস পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ কেউ মদ্যপ অবস্থায় রয়েছেন কিনা, তা দেখা হবে।
৭) মহিলা কর্মজীবীদের যৌন নির্যাতন রুখতে প্রতিটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ-সহ বিভিন্ন অফিসে বিশাখা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৮) হাসপাতাল-মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন অফিসে মহিলাদের নৈশকালীন ডিউটি বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে মহিলাদের সঙ্গে তাঁর পরিচিত কিংবা কোনও মহিলা সঙ্গিনীকে ডিউটি দেওয়া হয় তার উপরে বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্প কার্যকর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল
ক) প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহিলা হস্টেলে রাত ভর চলবে বিশেষ পুলিশ পেট্রলিং।
খ) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন থেকে চিকিৎসক-সহ প্রতিটি কর্মীকে গলায় ঝোলাতে হবে সচিত্র পরিচয়পত্র।
গ) নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা আধিকারিক নিযুক্ত করা হচ্ছে। তাঁরাই পুরো নিরাপত্তা তদারকির দায়িত্বে থাকবেন।
ঘ) কোনও মহিলা চিকিৎসক কিংবা কর্মীকে একটানা ১২ ঘন্টার বেশি ডিউটি দেওয়া যাবে না।
ঙ) সম্ভব হলে মহিলাদের নাইট ডিউটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।